প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুলিশ হেফাজতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে টানা সাতদিন উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। বর্বরোচিত ওই খুনের ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন শহরে তীব্র বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এই হত্যকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যেই দেশটিতে পুলিশের গুলিতে অন্তত তিন বিক্ষোভকারী নিহত এবং চার পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নাইন নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের লোয়া অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভের সময় গুলিতে ইতালিয়া মেরি কেলি নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীসহ অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, সোমবার রাজ্যের অন্তত ২০টি জায়গায় গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। ডাভেনপোর্ট মেয়র মাইক ম্যাটসন জানিয়েছেন, শহরটিতে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন, বাকি দু’জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
সিএনএন জানিয়েছে, সোমবার কেন্টাকির লুইসভিলে নিরাপত্তা সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ডেভিড ম্যাকআটি নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় দু’পক্ষের গোলাগুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। এ ঘটনার জেরে লুইসভিলের পুলিশ প্রধানকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সেন্ট লুইসে চার পুলিশ সদসস্যের ওপর গুলি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় তারা আহত হন। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত হলেও সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই বিক্ষোভ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই দাঙ্গার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে আমাদের দরিদ্র সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ জনগণ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি তাদের নিরাপদে রাখতে লড়ে যাবো। আমিই আপনাদের আইন।
ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের মিত্র’ বলে দাবি করলেও তার এই বক্তব্য চলাকালেই হোয়াইট হাউসের বাইরে চলছিল নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডব। এসময় বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট-টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে তারা। টেলিভিশনে ট্রাম্পের ভাষণের মধ্যেই বারবার মাথার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি ও সহিংসতার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমি দাঙ্গা, লুটপাট, সন্ত্রাস, সহিংসতা ও সম্পদ বিনষ্ট রোধে হাজার হাজার সশস্ত্র সৈন্য, মিলিটারি ও আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য নামাচ্ছি।
এসময় সড়কের দখল নিতে অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘যদি কোনও শহর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানায়ৃ তাহলে তাদের সমস্যা সমাধানে আমিই মিলিটারি নামিয়ে দেবো। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ব্রুকলিনের রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তাদের জায়গা করে দিতে এক পাশে সরে যায় সড়কের গাড়িগুলো।
সুবিচারের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের তুমুল স্লোগানের সঙ্গে হর্ন বাজিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন অনেক গাড়িচালকও। এসময় বিক্ষোভকারীদের পেছনে পুলিশের গাড়িও লক্ষ্য করা গেছে। একই সময় অপেক্ষাকৃত ছোট মিছিল বের হয়েছে হলিউডে। সেখানে কারফিউ অমান্য করেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে: এই হত্যাকাণ্ডে বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিশজুড়ে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ দুনিয়ার নানা প্রান্তে রাজপথে নেমে এসেছে মানুষ। এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি বৈষম্য ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে তারা।
যুক্তরাজ্য: রবিবার সকালে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ট্রাফালগার এলাকায় সমবেত হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। তাদের মধ্যে অনেকেই লন্ডনের মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে যাত্রা করেন।
কানাডা: বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কানাডায় দফায় দফায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের এসব বিক্ষোভ থেকে প্রতিবাদকারীরা পুলিশি নৃশংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। টরন্টোতে বিক্ষোভকারীরা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের নানা স্লোগান দেয়।
নিউজিল্যান্ড: এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার রাজপথে নেমে আসে নিউজিল্যান্ডের হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবাদকারীরা অকল্যান্ডে মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’; ‘নো জাস্টিস, নো পিস’ প্রভৃতি স্লোগান দেয়।
ডেনমার্ক: ডেনমার্কে প্রতিবাদকারীরা ‘স্টপ কিলিং ব্ল্যাক পিপল’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
জার্মানি: জার্মানিতে বিক্ষোভকারীরা দায়ী পুলিশ সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানান।